নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি : কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে মাহমুদা আক্তার উর্মি (১৪) নামে এক ছাত্রী চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন। ওই চিরকুটে লিখা ছিল ‘মা এবং বাবা কারও কাছে শান্তি পেলাম না’।
উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের উত্তর মাহিনী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উর্মি মাহিনী লতিফিয়া এনামিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ ব্যাপারে তার বাবা মজিবুল হক থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাহিনী গ্রামের চান মিয়া কবিরাজ বাড়ির আলী মিয়ার একমাত্র মেয়ে হালিমা বেগমকে তার আপন বোনের ছেলে একই ইউনিয়নের কুকিরিখিল গ্রামের মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মজিবুল হকের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর মজিবুল হক ওমান চলে যান। এরই মধ্যে তাদের সংসারে চার সন্তান জন্ম নেয়। মজিবুল হক প্রবাসে থাকা অবস্থায় সব টাকা তার স্ত্রী হালিমা বেগমের নামে পাঠান।
এদিকে, হালিমা মা-বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় তার বাবা আলী মিয়া সব সম্পত্তি মেয়ের নামে লিখে দেন। হালিমা বেগম বাবা এবং স্বামীর টাকা পেয়ে উশৃঙ্খল জীবন-যাপন শুরু করেন।
গত ৭/৮ মাস পূর্বে হালিমা বেগম একই ইউপির পূর্ব খাড়ঘর গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে নূরে আলমের সাথে পরকীয়ার জেরে আটক হন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মজিবুল হক ওমান থেকে দেশে আসার খবরে হালিমা বেগম পরকীয়া প্রেমিক নূরে আলমকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর হালিমা বেগম তার পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে বাবার বাড়ি উত্তর মাহিনী গ্রামে অবস্থান করেন। হালিমা বেগমের পূর্বের স্বামীর ছেলে-মেয়েরা কখনো নিজের কাছে আবার কখনো স্বামীর বাড়ি কুকিরিখিল গ্রামে থাকতেন। মাদরাসা পড়ুয়া মাহমুদা আক্তার উর্মি লেখাপড়ার সুবাদে মায়ের সাথে নানার বাড়িতে থাকতেন। হালিমা বেগম পরকীয়া প্রেমিকে নূরে আলমকে বিয়ে করার পর আবার তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে আবার তারা বিয়ে করেন। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়। পরে গ্রামবাসী হালিমা বেগম এবং তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।
ধারণা করা হচ্ছে, মায়ের উশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং বাবার নিকট অনাদর অবহেলায় উর্মি মানসিক চাপে ভুগছিলেন। আর সে চাপ সহ্য করতে না পেরে গত রবিবার বিকালে নানার বাড়ি নাঙ্গলকোটের রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের উত্তর মাহিনী গ্রামে আত্মহত্যা করে।
খবর পেয়ে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে।
উর্মির বাবা মজিবুল হক অভিযোগ করে বলেন, হালিমা খারাপ প্রকৃতির মেয়ে। জীবনের সব সঞ্চয় শেষ করে সে আমাকে সর্বশান্ত করেছে। তারা আমার মেয়েকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
নাঙ্গলকোট থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে নিহতের বাবা অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।